সেলফ ফান্ডে দেড় বছরে প্রতিষ্ঠা পাওয়া নাকি ফান্ডিং এর জন্য বছরের পর বছর তীর্থের কাক হয়ে থাকা – কোনটা করতে চান?

সেলফ ফান্ডে দেড় বছরে প্রতিষ্ঠা পাওয়া নাকি ফান্ডিং এর জন্য বছরের পর বছর তীর্থের কাক হয়ে থাকা – কোনটা করতে চান?

গত কয়দিন আগে আমার ইউনিভার্সিটির সামার টার্ম এর রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। আমি সামারে ক্লাউড কম্পিউটিং এর কোর্স পড়াই। সেখানকার মাস্টার্স সেকশনে আজকে পর্যন্ত ১৫৩ জন মাস্টার্স শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছে। সেই সেকশনের রোস্টার খুলে দেখি, এরা প্রায় সবাই (১৫৩ জনের মধ্যে মনে হয় ১৪৫ জন) হল ভারতীয় শিক্ষার্থী। এদের অনেকের সাথেই আমার তাদের ফান্ডিং নিয়ে কথা হয়েছে। এরা সবাই সেলফ ফান্ডে এসেছে। ৩০ ক্রেডিটের কোর্সওয়ার্ক মানে মোট খরচ প্রায় ৩৩ হাজার ডলারের মতো। কিন্তু এরা কেউই ভারতে বিশাল ধনী পরিবারের সন্তান না।

আমার প্রশ্নের জবাবে তারা জানালো, এর উত্তর খুব সোজা। ওরা যেভাবে পারে টাকা ধার করে বা অন্যভাবে ম্যানেজ করে আসে। এখানে কোনোমতে দেড় বছরের মধ্যে মাস্টার্স শেষ করে। এবং এখনকার চাকুরির বাজারে মাস্টার্স শেষ করামাত্র এরা চাকুরি পায় (কারণ ডেটা সাইন্স, সাইবারসিকিউরিটিতে লাখ লাখ চাকুরি খালি পড়ে আছে আমেরিকাতে)। আর চাকুরি পাবার পরে অল্প কয়েক মাস পরেই টাকা তুলে ফেলতে পারে। সেলফ ফান্ডের টাকাটা তাই ইনভেস্টমেন্ট মাত্র। এতো অল্প সময়ে ইনভেস্টমেন্ট করে টাকা তুলে ফেলতে পারলে আসবে না কেনো!

ইদানিং আমার ডিপার্টমেন্টে মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের সংখ্যার চাপে আমাদের ভর্তা অবস্থা। আগে যে ক্লাসে বড়জোড় ৩০-৪০ জন হতো, সেই ক্লাসে এখন ১৮০-২৩০ এমন বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী আসছে। কেবল এই ফলেই মাস্টার্স প্রোগ্রামে ১৮০০ জন অ্যাপ্লাই করেছে। এর মধ্যে ৩০০ জনের উপরে অ্যাডমিশন নিয়ে নিজের ফান্ডে পড়তে আসছে। এবং বলাই বাহুল্য, এরা সবাই ভারত থেকে আসছে। এসব শিক্ষার্থীরা ভাব ধরে না — তারা বাস্তবতা আর হিসাব বোঝে বলেই সিস্টেমটা ধরতে পেরেছে।

আমার দুঃখ এটাই – বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এই সিস্টেমটা ধরতে পারেন না। বা চান না। সেলফ ফান্ডে অ্যাপ্লিকেন্টদের মধ্যে বাংলাদেশের দুই-তিন জনের বেশি নাম দেখি না।

এখন এই পোস্টে কী কমেন্ট আসবে তাও আমি জানি,

(১) আমার পরিবারের টাকা নাই — কিন্তু আমি যেসব ছাত্রছাত্রীদের দেখি, এরাও একই আর্থিক অবস্থা থেকে এসেছে।

(২) ব্যাংক লোন দেয় না – চাহিদা থাকলে এবং টাকা বানাতে পারলে ব্যাংক লোন দিবে না এটা অবাস্তব ব্যাপার। আপনার ঠেকা থাকলে ব্যাংকের কাছে ধর্না দেন। অন্য সব দেশে এক নিয়ম, বাংলাদেশে অন্য হবে কেনো?

(৩) ভিসা দিবে না – একই অবস্থা ভারতেও। সবাই ভিসা পায় না। কিন্তু অনেকেই পায়।

(৪) ফান্ডিং না পেলে যাবই না – দরকার হলে পিএইচডিতে নাম লিখিয়ে ৫-৬ বছর ব্যয় করবো — তার পর কেবল মাস্টার্স হলেই চলে এমন চাকুরিতে যোগ দিব — হ্যাঁ, এর পর সময় মত দেড় বছরে মাস্টার্স করে ফেলা এমন কারো অধীনে এবং তাদের ৪ বছর পরে পাস করে পিছিয়ে থাকবেন, এই আর কি! (৪) “ভুলেও নিজের ফান্ডে এসে বিপদে পড়বেন না” – শিওর। দুনিয়ার সবাই একই রিস্ক নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নিয়ম মনে হয় আলাদা। ক্যালকুলেটেড রিস্ক নেয়া মনে হয় আমাদের জাতিগতভাবে নিষিদ্ধ ব্যাপার!

(৫) টাকা দিতে হলে এজেন্সি ধরে যাবো – হ্যাঁ, এইভাবে আইআন্তর্জাতিক নামের ফর প্রফিট হায় হায় ইউনিতে অনেকেই আসে এজেন্সি ধরে। কিন্তু একই খরচে সহজেই নানা স্টেইট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পারা যায়। সেই কথা মনে হয় প্রতিবেশী দেশের সবাই জানে, বাংলাদেশী কেউ জানে না!!


যাহোক অনেক কথা বলে ফেললাম। কেউ কিছু মনে করবেন না। সুন্দর সহজ সিস্টেমে প্রতিবেশী দেশ ভারতের হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে এগিয়ে যেতে দেখছি, দেখছি তারা কত দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের কাউকে দেখতে পাই না। সেজন্যই একটু দুঃখবোধ থেকে এই কথাগুলা বললাম। সিরিয়াসলি নেয়ার দরকার নাই।

Writer : Ragib Hasan

Comments are closed.