বিদেশে উচ্চশিক্ষা: ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম হতে পারে আয়ের পথ

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম হতে পারে আয়ের পথ

বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো উচ্চ টিউশন ফি এবং ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার খরচ মেলানো। এই খরচ সামলাতে অনেক শিক্ষার্থী রেস্টুরেন্টে রাতের শিফটে কাজ, সুপারমার্কেটে ক্যাশিয়ার হিসেবে বা ফুড ডেলিভারির মতো খণ্ডকালীন কাজ করেন। এভাবে জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে পারলেও এতে সময় ও শক্তি দুটোই নষ্ট হয়, পাশাপাশি ক্যারিয়ার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের সুযোগও সীমিত হয়ে আসে অনেক সময়।

এই চিত্র বদলে দিচ্ছে নতুন এক বিকল্প—ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে ২৫০ থেকে ৭০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। শুধু তা–ই নয়, এর মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং, নেতৃত্বের দক্ষতা উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগও পাবেন শিক্ষার্থীরা।

জনপ্রিয়তার কারণ

শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন এমন কাজের চাহিদা বেড়েছে, যা সময়ের ব্যাপারে সহনশীল, পাশাপাশি ক্যারিয়ার উন্নয়নে সহায়ক। প্রচলিত খণ্ডকালীন চাকরি থেকে আয় হলেও সেগুলো পরবর্তী চাকরির ক্ষেত্রে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় না।

ভারতের শিক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিভার্সিটি লিভিং’–এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৌরভ অরোরা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘আমাদের স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে কার্যক্রম, পারফরম্যান্স ও রেফারেলের ওপর নির্ভর করে সর্বোচ্চ ৬০০–৭০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে। কিন্তু আসল মূল্য হলো তারা যে দক্ষতাগুলো অর্জন করে, যা ভবিষ্যতের ইন্টার্নশিপ বা চাকরির ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হয়। এটি কোম্পানিগুলোর জন্যও লাভজনক। শিক্ষার্থীরা নিজেদের সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ব্র্যান্ডের জন্য স্বাভাবিক প্রচারকাজ করে, যা প্রচলিত বিজ্ঞাপনের চেয়ে বেশি কার্যকর হয়।’

ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডরের কাজ কী

ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর মূলত একটি ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাম্পাসে কাজ করেন। তাঁদের কাজের মধ্যে থাকে—

*ক্যাম্পাসে ইভেন্ট আয়োজন ও প্রচার

*সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন পরিচালনা

*নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসস্থান পরিদর্শনে গাইড করা

*বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের সঙ্গে কমিউনিটি তৈরি

*স্থানীয় ইভেন্টে অংশগ্রহণ।

ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের শুধু আর্থিক স্বাধীনতা দেয় না, বরং তাঁদের ক্যারিয়ার-প্রস্তুতিতেও সহায়তা করে। এখানে প্রচলিত খণ্ডকালীন চাকরির মতো দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয় না। ফলে পড়াশোনার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।

আয় এবং অন্যান্য সুবিধা

মাসিক আয়: কাজের ধরন ও পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে ৬০০–৭০০ ডলার পর্যন্ত আয় হয় এই ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডরদের।

অন্যান্য সুবিধা—

*ফ্রি ইভেন্ট টিকিট ও ব্র্যান্ডের গিফট আইটেম

*রেফারেল বোনাস, যেমন ইউনিভার্সিটি লিভিংয়ের ‘Refer a Friend’ অফার

*ভবিষ্যৎ চাকরির জন্য সার্টিফিকেট বা রেকমেন্ডেশন লেটার

*নেটওয়ার্কিং ও ইন্টার্নশিপের সুযোগ।

ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক দক্ষতা অর্জনে সহায়ক

এই প্রোগ্রামের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো শিক্ষার্থীরা এমন দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, যা ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে অত্যন্ত মূল্যবান। যেমন:

—নেতৃত্ব ও টিম ম্যানেজমেন্ট

—মার্কেটিং ও ডিজিটাল প্রমোশন

—ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও সাংগঠনিক দক্ষতা

—সমস্যা সমাধান ও প্রকল্প পরিচালনা।

শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব—

বিদেশে গিয়ে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া অনেক শিক্ষার্থীর জন্য কঠিন হয়। ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করলে তাঁরা সহপাঠীদের সঙ্গে মিশতে এবং কমিউনিটি গড়তে পারেন, যা সাংস্কৃতিকভাবে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করে। এটি স্থানীয় চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্যও একটি সহজ সুযোগ হতে পারে। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্যাফে বা দোকানে রাত জেগে কাজ না করেও আয় করতে পারেন এবং ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।

যেভাবে আবেদন করবেন—

ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর হওয়ার প্রক্রিয়াটি খুব সহজ—

*কোম্পানির ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থেকে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে

*সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার বা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে

*এখানে অভিজ্ঞতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় যোগাযোগ দক্ষতা, উদ্যম ও ক্যাম্পাসে সক্রিয়তার ওপর।

University Living, Amazon, Unilever এবং বিভিন্ন অ্যাডটেক স্টার্টআপ নিয়মিত এসব প্রোগ্রামের জন্য শিক্ষার্থী নিয়োগ করে। অনেক প্রতিষ্ঠানে সারা বছরই আবেদন খোলা থাকে। ফলে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় আবেদন করতে পারেন।

সূত্রঃ প্রথমআলো  

Comments are closed.